সংসারের মায়া, দায়িত্ব এবং মুক্তির পথ | Teachings of Sri Sri Ramthakur"

 সংসারের মায়া, দায়িত্ব এবং মুক্তির পথ | Teachings of Sri Sri Ramthakur"

বেদবানী প্রথম খন্ড - (১০২)নং পত্রাংশ ,শ্রী শ্রী রামঠাকুর। সংসার মায়াময়, সংসারের সকল রকম গঞ্জনা সহ্য করিয়া ভাগ্যানুসারে আয় ব্যয় স্থিতি করিয়া যায়, ইহাই পুরুষকার। দুঃখ হইবে বলিয়াই যে কর্ম্ম ত্যাগ করিবে, সুখ হইবে বলিয়াই যে কর্ম্ম করিবে, কি করিবে না, ইহা নয়। পিতা মাতা, ভাই ভগ্নী, খুড়া জ্যেঠা, মাসী পিসি, বাড়ীঘর, গ্রামবাসী, দেশবাসী, আত্মীয়, বন্ধু বান্ধব, শত্রু মিত্র, সৎ অসৎ সঙ্গ সকল ঋণগত কর্ম্মফল, ইহা সকলি ভাগ্যক্রমে প্রাপ্ত হয়। ইহাদের মধ্যে কাহার কোন দোষ নাই। ভাগ্যবশতঃ ফলাফল ভাল মন্দ ব্যবস্থা যা থাকে ইহাই ঋণবদ্ধ। এই সকলের গঞ্জনা যথাশক্তি সহ্য করিবে। যাহার যে প্রাপ্ত অংশ আছে তাহারা যে যে ভাবে আদায় করিতে পারে, সেই আদায়ের চেষ্টা করে। ইহাদিগকে ফাঁকি দিয়া বনে গিয়া কি ফল হইবে, কিংবা দেহ ছাড়িলেই বা কি হইবে? এদের ঋণ ত শোধ হইবেই না, দফে দফে চিরজন্মই ভোগ করিতে হইবে। এই গঞ্জনা সহ্য করিতে পারিবে না ভয়ে যদি জপ তপস্যা যোগ যাগ প্রবন্ধন করে তাহাতে ঋণ মুক্ত হয় না, বরং কর্ম্ম বৃদ্ধি হইয়া বন্ধনই হয়। অতএব ভাগ্যচক্রের অধীন হইয়া দিবানিশি কালোচিৎ প্রয়োজনীয় সংসারের আয় ব্যয় যথাসাধ্য ভাবে করিতে চেষ্টা করিতে ত্রুটি না করিয়া, ফল অফলে লক্ষ্য না করিয়া কর্ম্ম করিতে থাকিবে। এর মধ্যে যে কোন সময় পার ইষ্ট দেবতার মন্ত্রাদি নাম যথাসাধ্য করিবে, ইহাতেই ভজন সাধন সিদ্ধ হইয়া নিত্য মুক্ত হয়। এই যে বেগ সহ্য করিতে চেষ্টা করা ইহাকেই নিত্য তপস্যা বলে। এই ভাবে নিরপেক্ষতা করিয়া দেহ ত্যাগ করে। ইহাই সাধু, সন্ন্যাসী, ত্যাগী বলিয়া শাস্ত্রকারেরা বলিয়াছেন। সর্ব্ব শক্তিমান ভগবান সকলই সহ্য করিতে পারেন বলিয়া এবং কাহাকেও কোনরূপ উপেক্ষা করেন না, বিরক্তও হন না বলিয়া লোকে ভগবান বলে। তাঁহার ভক্তও তাঁহার কাছ হইতে শক্তি আহরণ এই ভাবেই করে। পক্ষে গেলে ভূত দ্বন্দন মায়ার বিপর্য্যয় তরঙ্গে পড়িয়া লাঞ্ছনা পাইয়া, ভাগ্যক্রমে সুখ দুঃখাদি শুভ অশুভ ভোগ করে। ভগবৎ প্রাপ্ত হয় না। 

শ্রী শ্রী রামঠাকুরের এই বাণীটি সংসার এবং মানবজীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর ভাবনার প্রতিফলন। এখানে তিনি সংসারের মায়া, জীবনের দায়িত্ব, এবং ভগবৎ প্রাপ্তির পথে যা কিছু বাধা, তার ওপর আলোকপাত করেছেন। চলুন একে একে প্রতিটি বিষয় বিশ্লেষণ করি:

  1. সংসার মায়াময়: রামঠাকুর বলছেন, সংসার হলো মায়া দ্বারা আবদ্ধ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা গঞ্জনা বা বিরূপ অভিজ্ঞতা সহ্য করেই আমাদের এই সংসারে এগিয়ে যেতে হয়।

  2. ভাগ্যানুসারে আয়, ব্যয় এবং স্থিতি: জীবনকে ভাগ্যের উপর নির্ভর করে পরিচালনা করতে হয়। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আয়, ব্যয় এবং স্থিতি বজায় রেখে এগিয়ে চলাই সত্যিকারের পুরুষকার বা সাহসিকতার পরিচয়।

  3. কর্ম্মের ত্যাগ বা গ্রহণ, সুখ বা দুঃখের আশ্রয় নয়: শুধুমাত্র দুঃখ হবে বলে কাজ পরিত্যাগ বা সুখের আশায় কাজ করা, এটা সঠিক পথ নয়। জীবনের প্রত্যেকটা ঘটনা আমাদের ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল।

  4. প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির জন্য কেউ দায়ী নয়: জীবনে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, গ্রামবাসী, বন্ধু-বান্ধব, শত্রু-মিত্র—এরা সবাই ভাগ্যক্রমে আমাদের জীবনে আসে। তাদের কারণে ঘটে যাওয়া ভালো-মন্দের জন্য কোনো ব্যক্তিই আসলে দায়ী নয়।

  5. ঋণগত কর্ম্মফল এবং এর দায়ভার: এই সম্পর্কগুলোর মধ্যে দিয়ে আমাদের পূর্বজন্মের কর্ম্মফলভোগ হচ্ছে। এই ঋণ শোধ করতেই হয় এবং এর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে দুঃখ সহ্য করতে হবে।

  6. কোনো কিছুর জন্য বনে গিয়ে বা দেহ ত্যাগ করে মুক্তি লাভ সম্ভব নয়: সংসার ছেড়ে একা বনবাস বা দেহত্যাগ করলেও এই ঋণ শোধ হয় না। বরং বারবার জন্ম নিয়ে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

  7. জপ, তপস্যা করলেই ঋণমুক্তি হয় না: যদি কেউ ভয় পেয়ে জপ, তপস্যা শুরু করেন, তাহলে তা ঋণমুক্তির বদলে বরং কর্মের বন্ধনই বৃদ্ধি করবে।

  8. ভাগ্যের অধীন হয়ে কাজ করে যাওয়া এবং ফলের দিকে নজর না রাখা: আমাদের উচিত ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণ মেনে নেয়া, আয়-ব্যয় সামঞ্জস্য রেখে কাজ করা, এবং তার ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তা না করা।

  9. ইষ্ট দেবতার নাম স্মরণ করা: এই সংসারিক দায়িত্ব পালন করেই এবং সময় পেলেই ইষ্ট দেবতার নাম স্মরণ করাই আসল ভজন বা সাধনা।

  10. তপস্যার আসল অর্থ: জীবনের নানা গঞ্জনা সহ্য করাই আসলে নিত্য তপস্যা। এই তপস্যার মাধ্যমেই আমরা সংসার থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি।

  11. সাধু, সন্ন্যাসী, ত্যাগীর প্রকৃত সংজ্ঞা: দেহত্যাগ করার আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই সাধু বা ত্যাগী হওয়া সম্ভব। শাস্ত্রকারেরা এরকম মানুষের প্রশংসা করেছেন।

  12. ভগবানকে সকলেই সহ্য করেন বলে লোকে ভগবান বলে: ভগবান তাঁর অসীম শক্তির মাধ্যমে সকলকে সমানভাবে সহ্য করতে পারেন, তাই মানুষ তাঁকে ভগবান বলে। ভগবানের ভক্তরাও তাঁর কাছ থেকে এই শক্তি পান।

  13. সুখ-দুঃখ ভোগ এবং ভগবৎ প্রাপ্তির পথ: জীবনে সুখ-দুঃখ, মায়ার বিপর্যয় সবই ঘটে। এগুলি আসলে ভাগ্যের খেলা। তবে, এই সুখ-দুঃখে আটকে থাকলে ভগবৎ প্রাপ্তি সম্ভব নয়।

এই বাণীতে রামঠাকুর বোঝাতে চেয়েছেন যে, সংসারের মায়া-মোহে না জড়িয়ে নিরাসক্ত থেকে নিজের দায়িত্ব পালন করাই সঠিক পথ।


শ্রী শ্রী রামঠাকুরের (Sri Sri Ramthakur) মহান বাণী থেকে আমরা জানতে পারি সংসারের প্রকৃত অর্থ, জীবনের বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও কীভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হয়, এবং প্রকৃত মুক্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার পথ। জীবনের সুখ-দুঃখ, মায়া-মোহ, এবং সম্পর্কের ঋণ সবই ভাগ্যের খেলা। এই সকল প্রতিকূলতা সহ্য করাই নিত্য তপস্যার মতো। চলুন, এই শিক্ষাগুলি থেকে অনুপ্রাণিত হই এবং জীবনকে নতুনভাবে দেখি।

জয়রাম জয় গোবিন্দ!
এই ভিডিওটি দেখার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। শ্রী শ্রী রামঠাকুরের আশীর্বাদে আপনার জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে পূর্ণ হোক। আমাদের সাথে যুক্ত থাকার জন্য কৃতজ্ঞ। পরবর্তীতেও এমনই ভক্তিমূলক ভিডিও পেতে আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন এবং শেয়ার করতে ভুলবেন না।"


সংসারের মায়া, দায়িত্ব এবং মুক্তির পথ | Teachings of Sri Sri Ramthakur" সংসারের মায়া, দায়িত্ব এবং মুক্তির পথ | Teachings of Sri Sri Ramthakur" Reviewed by srisriramthakurfbpage on নভেম্বর ১২, ২০২৪ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

 


Blogger দ্বারা পরিচালিত.