গুণ ও ভগবানের রাজ্যে – সত্ত্ব, রজ, তমের ভূমিকা
এই শাস্ত্রীয় আলোচনা মানুষের সুখ, দুঃখ, শান্তি ও অশান্তির মূল কারণ এবং ভগবানের রাজ্যে এই অনুভূতিগুলির প্রকৃত অবস্থানকে ব্যাখ্যা করে। এটি মূলত গুণের বিভিন্ন প্রকার এবং গুণাতীত অবস্থার প্রতি মানুষের অগ্রগতির প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে।
ভগবানের রাজ্যে সুখ দু:খ,শান্তি অশান্তির তরঙ্গ নাই।অনুভূতি যাহা লোকে সাধনাদি সূত্রে লাভ করে তাহা কেবল গুনের বণ্টন অবস্থা,তরঙ্গমাত্র।সত্ত্ব গুনের আধিক্যে সুখ অনুভূতি,রজ গুনের আধিক্যে চঞ্চল নানান চেষ্টা কর্ম্ম করার ইচ্ছা,তম গুনের আধিক্যে চঞ্চল নানান অভাব বিষাদ প্রমাদ নানান অশান্তির উৎকর্ষন করিয়া থাকে।অতএব সর্ব্বদা নির্ধূত গুণাতীত গুরুবাক্যে আস্থা করিয়া থাকিলে ক্রমে ক্রমে গুন সকল আপন বশবর্তীতে আসিয়া পরমপদ ভক্তির সঞ্চার করিয়া থাকে।ভগবানের নিকটেও অভাবাদি গুণ হইতে যাহা হয় তাহা ভগবানকে নিয়াই খেলা করে। (১/১৩০)
পয়েন্ট ধরে বিশ্লেষণ:
ভগবানের রাজ্যে অনুভূতি নেই:
ভগবানের রাজ্যে সুখ-দুঃখ বা শান্তি-অশান্তির মতো কোনো তরঙ্গ নেই। সেখানে সবকিছু অপরিবর্তনীয় ও শাশ্বত।মানবীয় অনুভূতি:
মানুষের অনুভূতি—সুখ, দুঃখ, ইত্যাদি—শুধুমাত্র গুণের (সত্ত্ব, রজ, তম) বণ্টনের ফল। এগুলি তরঙ্গমাত্র, যা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রকাশিত হয়।সত্ত্ব গুণের প্রভাব:
যখন সত্ত্ব গুণ বৃদ্ধি পায়, তখন সুখ ও প্রশান্তির অনুভূতি সৃষ্টি হয়।রজ গুণের প্রভাব:
রজ গুণ বৃদ্ধির ফলে মন চঞ্চল হয় এবং কর্মের প্রতি প্রবল আকর্ষণ জন্মায়।তম গুণের প্রভাব:
তম গুণের আধিক্য হতাশা, অভাববোধ এবং অশান্তির সৃষ্টি করে।গুণাতীত অবস্থার গুরুত্ব:
গুরুর বাণী ও নির্ধূত গুণাতীত অবস্থার প্রতি বিশ্বাস রেখে মানুষ ক্রমশ নিজের গুণগুলিকে নিয়ন্ত্রণে এনে ভক্তির উচ্চস্থানে পৌঁছাতে পারে।ভগবানের গুণ-খেলা:
ভগবানের ক্ষেত্রে অভাবাদি গুণ (যেমন লীলা) শুধুমাত্র তাঁর খেলার অংশ। এটাই তাঁর মহিমার প্রকাশ।
উপসংহার:
জীবনে সুখ-দুঃখের অনুভূতি গুণের বণ্টনের ফল। ভগবানের নিকট ভক্তি এবং গুণাতীত অবস্থায় স্থিতি লাভ করতে হলে গুরুর প্রতি আস্থা রাখতে হবে এবং নিজের গুণগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এতে করে জীবনে সত্যিকারের শান্তি ও ভগবতের সান্নিধ্য লাভ সম্ভব।
কোন মন্তব্য নেই: