ভক্তের বোঝা ভগবান বয়
প্রভাত চক্রবর্তী শ্রীশ্রীঠাকুরের একনিষ্ঠ ভক্ত ।
শ্রীশ্রীঠাকুর প্রভাত চক্রবর্তীর বাড়ীতে।
সরাসরি ঠাকুরকে বললেন ," আজ আপনাকে একটা প্রশ্ন কোরবো , আপনাকে সঠিক উত্তর দিতে হবে।"
শ্রীশ্রী ঠাকুর বললেন, " আপনি যা কন আমি তো সব কথার ই উত্তর দেই।"
" না, এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর আপনাকে দিতে হবে।
আপনার নানারকম শ্রীপট দেখতে পাই , কিন্তু সবখানেই কন্ঠিমালা পড়া আছে। আমাদের পরিচিত অনেকেই পড়ে ,তারা ধোয় , পরিস্কার করে, কখনো খোলে। কিন্তু আপনাকে কখনোই খুলতে দেখি না । এর কারণ আজ আমায় বলতেই হবে।
"
শ্রীশ্রী ঠাকুর বললেন ," এ জাইন্যা আপনার কি হইবো? নাম করেন।"
নাম করি বলেই তো জানতে চাইছি। আজ আপনাকে বলতেই হবে ।
অনেক চাপান- উতোরের পর ঠাকুর বলতে শুরু করলেন..….." পাঁচশো বছর আগে শ্রীচৈতন্য ( ওরফে ঠাকুর) পর্যটনে বেড়িয়েছেন। দক্ষিণ ভারত ভ্রমণকালে তিনি এক বাড়ীতে এক পক্ষকালের জন্য ছিলেন। সেই বাড়ীতে স্বামী - স্ত্রী আর তাঁদের একটি পুত্র সন্তান। দুজনের ভীষন আনন্দ স্বয়ং ঠাকুর তাদের বাড়ীতে আছেন।
কিন্তু ছেলেটি শ্রীচৈতন্য (ওরফে ঠাকুর) কে দেখেই কাঁদতে শুরু করে। এতে বাড়ীর লোক চিন্তিত হয়ে পোড়লো বাচ্চার এই আচরণে।
একদিন বাড়ীতে কেউ ছিলো না। ছেলেটিকে প্রশ্ন করলেন শ্রীচৈতন্য , এমন কাঁদার কারন কি? ছেলেটি বললো , 'তোমার এই রূপ আমার ভালো লাগে না।
তোমার বাঁশি বাজানো রূপ আমায় দেখাও।' ছেলেটিকে দেখালেন কৃষ্ণরূপ। এরপর থেকে ছেলেটি আর কাঁদেনি। একপক্ষকাল পরে শ্রীচৈতন্য যখন চলে যাচ্ছেন বাচ্চাটির বায়না শুরু হলো ঠাকুরের সাথে যাবেন।
বোঝালেন শ্রী চৈতন্য, 'বাবা -মা দেহাবসানের পর তিনি ডেকে নেবেন। আর নবদ্বীপে একসাথে থাকবেন কথা দিলেন।
বাবা-মা মারা যাবার পর সেই ছেলেটি নবদ্বীপে গিয়ে শ্রীচৈতন্যের সাথেই থাকতে শুরু করলেন।
অবশেষে একদিন তাঁর মৃত্যুকাল আসন্ন । বিছানায় শায়িত সেই ভক্ত। স্বয়ং শ্রীচৈতন্য শয়ণকক্ষে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে দেখেন ,
চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
জানতে চাইলেন ঠাকুর ," তুমি কাঁদছো কেন? এতো বড়ো ভক্ত তুমি । এতো নাম করেছো , তোমার এই কন্ঠ শুধু নাম ই করেছে । তুমি তো ভাগ্যবান।" উত্তরে জানিয়েছিলো ,'আমি তো জানি , আমি তোমার কাছেই যাবো। কিন্তু আমার দেহাবসানের পর আমার এই কন্ঠ ও তো হারিয়ে যাবে। এতো নামে ভরা কন্ঠ। সেই দুঃখেই আমি কাঁদছি।'
শ্রীচৈতন্য তখন বললেন, ' ঠিক আছে এই নামে গাঁথা কন্ঠ আমি গলায় ধারণ করলাম। '
সেই থেকেই কন্ঠিমালা আজ ও ঠাকুরের গলায়।
ঠাকুর বলেছিলেন , " ভক্তের বোঝা ভগবান ই বয়"।
জয়রাম জয়রাম।
প্রভাত চক্রবর্তীর ছেলে ফণীভূষণ চক্রবর্তীর কাছ থেকে শুনেছিলেন সবসময়ের সাথী শ্রীযুক্ত নকুল চন্দ্র দে মহাশয়।
আমাদের বলতে গিয়ে তিনি অঝোড়ে কাঁদছিলেন। ভালোলাগা আর ভালোবাসার মেলবন্ধনে এমন ই ভাবাবেগ হয়।
*******
একদিন শ্রীযূক্ত নকুল চন্দ্র দে, ফণীভূষণ চক্রবর্তীর বাড়ীতে গেছেন। ফণীবাবু অন্ধ ছিলেন। একাই থাকতেন । ছোট্ট একটা তক্তাপোষ ।
ঘরে ঢুকতেই ফণীবাবু তক্তাপোষের একটা কোণ দেখিয়ে প্রণাম করতে বললেন। বিস্মিত শ্রীযুক্ত নকুল চন্দ্র দে।
কারন জানতে চাইলেন । উত্তর শুনে কেঁদেছিলেন নিশ্চয় ই , আমাদের বলতে গিয়ে কাঁদছিলেন সাথে আমরাও।
ওই তক্তাপোষের কোণায় ঠাকুর এসে বসেছিলেন।
প্রণাম করেছিলেন নকুলবাবু। স্বপ্নে দেখেছিলেন কি না জানতে চাইলে ফণীবাবু বলেছিলেন, " যেমন আপনাকে দেখছি তেমন ই ঠাকুরকে দেখতে পেয়েছি।
ঠাকুর আমায় লিখতে বললেন ।"
ভক্তের সংশয়ের ভার এখানেও ভগবান লাঘব করলেন।
ফণীবাবুর সংশয় ছিলো ঠাকুর প্রসঙ্গ লেখায়।
কিন্তু সকলের অনুরোধ ছিলো যেন লেখেন ঠাকুরের কথা। এবার ফণীবাবুর সব সংশয় দূর করলেন ঠাকুর। ঠাকুর লিখতে বললেন ফণীবাবুকে।
রচিত হলো ' শ্রুতিতে রামঠাকুর'।
গুরু কৃপাহী কেবলম্।
কোন মন্তব্য নেই: