"শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বাণী: ১০৮ নং পত্রাংশের গভীর শিক্ষা"
জয়গুরু। আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই আমাদের আজকের ভিডিওতে। আজ আমরা এক অনন্য আধ্যাত্মিক শিক্ষার দিকে তাকাবো, যা শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবানীর প্রথম খণ্ডের ১০৮ নং পত্রাংশে উজ্জ্বল হয়ে আছে। ঠাকুরের এই পত্রাংশ আমাদের শেখায় কীভাবে জীবনের ঝঞ্ঝাট, প্রতিকূলতা এবং দৈনন্দিন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ভগবৎচিন্তায় লীন থাকা যায়। আসুন, এই পবিত্র বাণী থেকে প্রেরণা গ্রহণ করি।"
করুণাময় দয়াল ঠাকুর, তোমার চরণে শতকোটি প্রণাম জানিয়ে শুরু করছি।
বেদবানী প্রথম খন্ড - (১০৮) নং পত্রাংশ ,শ্রী শ্রী রামঠাকুর।
ভগবান পদ পাইবার জন্য কর্ত্তৃত্বাভিমান মতে কোন প্রার্থনা রাখিতে হয় না। অদৃষ্টক্রমে কর্ম্মসূত্র দ্বারা যে রকম সমাজেই যে অবস্থা আবরণে পড়িয়া জন্ম পাইতে হয় তাহাতে বিরক্ত না হইয়া, সহিষ্ণুতা দ্বারা সর্ব্বদা ভগবৎ চরণে মতি রাখিয়া লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, পিতা মাতা সম্বন্ধীয় যাবতীয় বেগ সহ্য করিতে করিতে, ভগবানের নাম করিতে করিতে দেহরূপ হইতে মনের সকল অভাব মোচন হইয়া যাইবে। তারপর আর কোন বাঁধা থাকিবে না, তখন পরম আনন্দরসে ভাসিতে থাকিবে। ভগবান কৃপা করিলেই তাহার উপর নানা ঝঞ্ঝাট উপস্থিত হইয়া থাকে। ইহাই মঙ্গল জানিবে। যথাসাধ্য আত্মীয় স্বজনের আচারে দ্বারা বিরক্ত না হইয়া তাঁহাদের তৃপ্তির জন্য চেষ্টা করিবে। যাহা যখন সময় পাইবে, নাম করিবে। এতৎভিন্ন যত পারিবে মনে মনে ভগবান নিকটে আছে এই চিন্তা করিয়া নাম করিবে। ইহাতেই ভগবানের নিকটে যাইবে।
বেদবানী, প্রথম খণ্ডের ১০৮ নম্বর পত্রাংশ শ্রী শ্রী রামঠাকুরের গভীর আধ্যাত্মিক নির্দেশনা বহন করে। এই অংশে ভগবান প্রাপ্তির পথে একজন ভক্তের করণীয় ও মানসিকতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে নির্দেশিত প্রতিটি বিষয়ের ব্যাখ্যা বিশদভাবে করা হলঃ
১. কর্তৃত্বাভিমান ও প্রার্থনা:
শ্রী ঠাকুর এখানে বলেছেন, ভগবান প্রাপ্তির জন্য আমাদের অহংকার বা কর্তৃত্বের মনোভাব ত্যাগ করতে হবে।
- কর্তৃত্বাভিমান: যখন কেউ ভাবে যে সে বিশেষ কিছু, কিংবা তার বিশেষ যোগ্যতা আছে, তখন তা ঈশ্বরের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। ভগবান বিনম্র চিত্ত ও সরল হৃদয়ে প্রেমের সাড়া দেন।
- প্রার্থনা ছাড়া ঈশ্বর লাভ: এখানে বোঝানো হয়েছে, ভগবানের কৃপা তার ইচ্ছামতো হয়। তাই আমাদের অনবরত নাম জপ ও স্মরণই যথেষ্ট।
২. কর্মফল ও সমাজে অবস্থান:
ঠাকুর বলেছেন, অদৃষ্টের (কর্মফল) প্রভাবে মানুষ যেকোনো অবস্থায় জন্ম নিতে পারে।
- বিরক্তি না হওয়া: মানুষ জন্মের পর যে সামাজিক বা পারিবারিক পরিস্থিতিতে পড়ে, তাতে বিরক্ত না হয়ে সেই পরিস্থিতিকে ঈশ্বরের ইচ্ছা বলে মেনে নিতে হবে।
- সহিষ্ণুতা ও ভগবান স্মরণ: দুঃখ-কষ্ট সহিষ্ণুতার সঙ্গে সহ্য করে ভগবানকে স্মরণ করলে মনের সমস্ত অভাব দূর হবে। এটি সৃষ্টির ন্যায়সংগত ধারণা: ধৈর্যই মুক্তির পথ।
৩. লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা:
জীবনের প্রতিকূলতা ভগবানের কৃপা বলেই বিবেচিত।
- ঠাকুরের মতে, ভগবান যাকে কৃপা করেন, তার জীবনে নানা ধরণের ঝঞ্ঝাট ও পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়।
- ঝঞ্ঝাটের মাহাত্ম্য: এই ঝঞ্ঝাট আমাদের আত্মশুদ্ধি ও ভগবানের প্রতি নিবিড় ভক্তির পথে পরিচালিত করে। এটি মঙ্গলের অংশ।
৪. আত্মীয়-স্বজন ও পারিবারিক দায়িত্ব:
ঠাকুর বলেছেন, পরিবারের সদস্যদের আচরণে বিরক্ত না হয়ে যতটা সম্ভব তাদের খুশি রাখতে হবে।
- তাদের তৃপ্তির জন্য চেষ্টা: ভক্তের কর্তব্য আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দায়িত্ব পালন করা, তবে এতে যেন ঈশ্বরচিন্তা বা স্মরণ ব্যাহত না হয়।
- সময় অনুযায়ী নাম জপ: পারিবারিক দায়িত্ব পালন করার ফাঁকে, যখন সময় পাওয়া যায়, তখন ভগবানের নাম জপ করা উচিত।
৫. ভগবান নিকটবর্তী হওয়া:
ভক্তের মনে সর্বদা এই চিন্তা রাখা উচিত যে ভগবান তার খুব কাছেই রয়েছেন।
- মনে মনে স্মরণ: ঠাকুর এখানে বলেছেন, ঈশ্বরের নাম জপ করার জন্য আলাদা কোনো সময় বা উপাচার প্রয়োজন নেই। যতটা সম্ভব মনে মনে ভগবানের উপস্থিতি অনুভব করেই তাঁর নাম স্মরণ করা উচিত।
- ভগবানের সঙ্গে একাত্মতা: এভাবে স্মরণ করতে করতে ভক্ত ভগবানের সান্নিধ্যে পৌঁছে যাবে এবং পরম আনন্দের রসে ভেসে থাকবে।
সংক্ষেপে মূল বার্তা:
১. ভগবান প্রাপ্তির পথে অহংকার পরিত্যাগ করে বিনম্র চিত্তে অগ্রসর হতে হবে।
২. জীবনযাপনের দুঃখ-সুখ ভগবানের ইচ্ছা মনে করে সহ্য করতে হবে।
৩. পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে, তবে মনোযোগ ভগবানের নামজপ থেকে সরানো যাবে না।
৪. ভগবান সর্বদা কাছেই রয়েছেন—এই অনুভূতি নিয়ে অন্তরে তাঁর নাম স্মরণ করলে মুক্তি এবং আনন্দসাগরে ডুব দেওয়া সম্ভব।
এই নির্দেশনা ঠাকুরের আধ্যাত্মিকতার সহজ-সরল পথ এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে তা সংযুক্ত করার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত।
"আপনাদের সময় এবং সমর্থনের জন্য আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বাণী থেকে আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করি, তা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আমাদের পথপ্রদর্শক হতে পারে। আমাদের চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য কৃতজ্ঞ। ঠাকুরের কৃপা সর্বদা আপনার এবং আপনার পরিবারের ওপর বর্ষিত হোক।
জয়গুরু।"
কোন মন্তব্য নেই: