শতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ চলমান ১৫৫

 ইহাতে আমার দুঃখ ও অভিমান আরও বাড়িয়া গেল। আমার দুই চোখ সজল হইয়া উঠিল। বহু কষ্টে নিজেকে সংযত করিয়া অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে কহিলাম, “বাবা, সবেমাত্র দুই তিন দিন হল এসেছেন আর আপনার শরীরও ভাল না, এ অবস্থায় কোথাও যাওয়া ঠিক হবে না। বরং এখানেই কিছুদিন বিশ্রাম করুন।” ঠাকুর বলিলেন "যেমন ইচ্ছা।” পুনরায় বলিলাম, হাঁ বাবা, কিছুদিন এখানেই বিশ্রাম করুন।" তিনিও পুনরায় ঐ কথাই বলিলেন, "যেমন ইচ্ছা।”

তখন বেলা প্রায় ১২টা হইবে। প্রখর রৌদ্র, ঠাকুর জিজ্ঞাসা করিলেন, "এই রৌদ্রে আপনি কোথায় যান?" ক্ষোভে দুঃখে ও অভিমানে আমার বুক ফাটিয়া যাইতেছিল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিলাম আর শ্রীদেহের সঙ্গ করিব না। পুনরায় ঠাকুর বলিলেন; “এই রৌদ্রে আপনি কোথায় যান?” অন্ততঃ ৪/৫ বার তিনি এই কথা উচ্চারণ করিলেন। আমি উত্তর না দিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে প্রমথদাদার বাসার দিকে রওনা হইলাম। আমাকে দেখিয়াই প্রমথদাদা বলিলেন, "কী! তুলসী, তুমি কাঁদছ কেন?” তাঁহার নিকট সমস্ত ঘটনা খুলিয়া বলাতে তিনি আমাকে শান্ত হইতে উপদেশ দিলেন।
অন্নপ্রাশনান্তে সেরাজদীঘা হইতে ফুলগাজী প্রত্যাবর্তন করিলাম। প্রায় এক মাস অতীত হইতে চলিল ঠাকুরের সঙ্গে আর দেখা করি না। বাড়ীতে ঠাকুরের যে শ্রীপট আছে প্রত্যহ তাহাই পূজা করি। ঠাকুর ফেণীতে সেই বাড়ীতেই আছেন। যতই দিন যাইতে লাগিল ততই আমি মনে যেন একটা চাপা ব্যথা অনুভব করিতে লাগিলাম, অনুশোচনা ও আর্তিতে আমার হৃদয় মুষড়াইয়া পড়িল; ক্রমে ঠাকুর-দর্শনার্থে মনের আকুতি আমাকে অত্যন্ত উতলা করিয়া তুলিল। এমন সময় ফেণী হইতে একখানা চিঠি পাইলাম তাহাতে লেখা ছিল, ঠাকুর আমাকে দেখিবার জন্য উতলা হইয়া উঠিয়াছেন। তখনই ফেণী রওনা হইলাম। ঠাকুর-বাড়ীতে পৌঁছিবামাত্র বাড়ীর সকলে আগ্রহ সহকারে আমাকে ঠাকুরের নিকট পৌঁছাইয়া দিয়া দরজা বন্ধ করিয়া দিলেন। প্রণাম করিতেই ঠাকুর জিজ্ঞাসা করিলেন, 'কেমন আছেন?' উত্তর করিলাম, "ভালই রেখেছেন বাবা।” ঠাকুর ধীর গম্ভীরস্বরে আমাকে তিরস্কারের ভঙ্গীতে বলিলেন "কত বড় হইছেন! একটু তো সহ্য করতে পারলেন না, দ্যাখেন না নূতন ফাস পাইয়া গাছগুলি যখন খুব লম্বা তাজা হইয়া ওঠে, ঝড়ের একটা দমকা হাওয়াতেই মাঝখানে ভাঙ্গে, সেখান থেকে আর ডালপালা গজায় না।" আমি ঠাকুরের শ্রীচরণ দুখানা ধরিয়া কাঁদিতে লাগিলাম, চোখের জলে আমার বুক ভাসিয়া গেল। দয়ানিধি ঠাকুর 'জয় গোবিন্দ, জয় গোবিন্দ' বলিয়া আমার মাথায় হাত বুলাইয়া দিতেই আমার মনের পুঞ্জীভূত গ্লানি দূর হইয়া গেল।
শতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ
চলমান ১৫৫,,,,,,।
শতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ চলমান ১৫৫ শতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ চলমান ১৫৫ Reviewed by srisriramthakurfbpage on ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

 


Blogger দ্বারা পরিচালিত.